জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলছেন, জিম্মি অবস্থায় বড় ছেলে বন্দুকের নিচে রয়েছে। সেখানে সে ভালো নেই।
জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলছেন, জিম্মি অবস্থায় বড় ছেলে বন্দুকের নিচে রয়েছে। সেখানে সে ভালো নেই।
নাবিক তরিকুল ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন প্রশ্ন রাখেন সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে ২৭ দিন ধরে ছোট ভাই (তরিকুল) জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন, সেখানে কীভাবে আমরা ভাল থাকি। তিনি বলেন, মা-বাবাসহ আমাদের পরিবারের কারো মন ভালো নেই।
শুধু নাবিক শিশু ও আতিকের স্বজনরাই নয়, জিম্মি থাকা ২৩ নাবিকের পরিবারে একই অবস্থা। আর মাত্রা একদিন পর ঈদুল ফিতর।
গতকাল রবিবার জিম্মি নাবিকদের কয়েকজনের পরিবার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের ঘরে কাপড় ছোপড়সহ ঈদের কোনো ধরনের কেনাকাটা হয়নি। তাদের এখন রোজা রেখে দিন কাটছে। ঈদের আনন্দ নেই। যদি ঈদের আগে নাবিকরা মুক্তি পান তাহলে এর চাইতে বড় খুশির খবর আর কিছু নেই। তারা মুক্তি না পেলে এবারের ঈদ স্বজনদের কাছে আনন্দের হয়ে উঠবে না।
আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম রবিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, আতিকের তিন শিশু কন্যা এখনো জানে না তাদের বাবা জিম্মি অবস্থায় আছে। তবে মাঝে মাঝে জানতে চায় আব্বু কোথায়। আমরা বলি তোমার আব্বু ভালো আছে। আসলে ভালো নেই। সেখানে (জাহাজে) তারা মানসিক চাপে আছে। ঘুমাতে পারে না।
একাধিক স্বজন জানান, নাবিকদের ছয় থেকে নয় মাস জাহাজে অবস্থানের কথা ছিল। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচমাস কেটে গেছে। তবে এবার ঈদুল ফিতরে কারো বাড়ি আসার কথা ছিল না। জাহাজে যেখানে অবস্থান থাকবে, সেখানে ঈদ করার কথা ছিল। কিন্তু জিম্মি হওয়ার পর থেকে নাবিকদের জন্য পরিবার স্বজনরা চিন্তিত। প্রায় একমাস হচ্ছে এখনো মুক্তির কোনো সুখবর নেই। এই অবস্থায় নাবিকদের পরিবারে ঈদের আনন্দ থাকার কথা না। সবার মাঝে এক ধরনের অজানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে জাহাজ মালিকপক্ষ স্বজনদের আশ্বাস দিয়েছে, তারা চেষ্টা করছেন যত দ্রুত সম্ভব নাবিকদের সবাই অক্ষত ও নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার।
জানতে চাইলে জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, নাবিকদের মুক্তির বিষয় নিয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঈদের পরে মুক্তির সম্ভাবনা বেশি। তাদের (দস্যুদের) যোগাযোগ চলমান আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুল বলেন, আমরা সব সময় নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে আছি। ঈদের সময়ও আমরা নাবিকদের পরিবারের পাশে থাকব।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে। নাবিকদের পরিবারে ঈদের আনন্দ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, তাদের তো এই ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল না। মানসিক অশান্তি থেকে তাদের যতদ্রুত সম্ভব মুক্তি দেওয়া যায়, সরকারও সে চেষ্টা করছে। তবে তাদের পরিবারে আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। সরকার নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে আছে। জিম্মিদশা থেকে নাবিকদের মুক্ত করার সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে সমঝোতা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তা নাহলে জাহাজে নাবিকদের সঙ্গে দস্যুরা ভালো আচরণ করত না।
নাবিকরা এখন নানামুখী সমস্যায়
এদিকে নাবিকদের পরিবারের সদস্যারা জানান, জিম্মি অবস্থায় নাবিকরা নানা সমস্যায় আছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্বজন জানান, নাবিকদের প্রতিদিন এক তরকারি শুধু ছাগলের মাংস খেতে হচ্ছে। পানি সংকটের কারণে এখন সপ্তাহে দুইদিন গোসল করতে দিচ্ছে। সামনে একদিন করে গোসলের সুযোগ দেবে। কম বেশি সকলে চর্মরোগে ভুগছে। কিন্তু ওষুধ খেতে পারছে না। অনেক কষ্টে রয়েছে নাবিকরা।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে ক্যাপ্টেন, ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি হয়। গত ২৬ দিন ধরে নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই জাহাজটি সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে। জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে পৌনে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।