প্রতিটি বাবা-মা চান তাদের আদরের সন্তান যেন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। আর ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই কোনটা ভুল ও কোনটা ঠিক তার শিক্ষা দেওয়া অতি জরুরি। সাধারণত ছোটবেলার শিক্ষাটাই সন্তানের বড় হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ভালো আচার-আচরণ ও শিষ্টাচারগুলি শেখানো উচিত। কারণ সু–আচার–আচরণগুলি পরবর্তীতে বাচ্চাদের জন্যই উপকারি হয়ে ওঠে। এতে করে শিশুদের আত্নসম্মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিকতা ও ভদ্র, বিনয়ী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই অন্যের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মনোভাব তৈরি করতে হবে। শিশুকে শেখাতে হবে অন্য কেউ বিপদে পড়লে তাকে নিয়ে হাসি বা মজা না করে বরং সহযোগিতা করা উচিত।
সন্তানকে ভালো আচার-আচরণ শেখানোর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কোনও কিছু চাওয়ার সময় ‘প্লিজ‘ বলা এবং কোনও কিছু পেলে ‘ধন্যবাদ‘ বলা শেখানো উচিত।
অন্য কারও কোনও জিনিসে, এমনকি শিশুর মা–বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে শেখানো উচিত। এ ছাড়া অন্য কারও জিনিস না বলে ধরা উচিত নয় এটা সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কারও কিছু নিলে সেটা যথাযোগ্যভাবে ফেরত দেওয়া শেখানোটাও জরুরি।
মানুষ সামাজিক জীব। পৃথিবীতে সবাইকে একত্রে বসবাস করতে হয়। তাই সন্তানকে ছোট থেকেই শেয়ারিং বা ভাগাভাগি করে নেওয়া শেখাতে হবে। ছোট বা বড় ভাইবোন থাকলে তাদের সাথে বা আশে-পাশের বন্ধুদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া উচিত। এতে শিশুমনে বিদ্বেষ ও লোভ জন্ম নিতে পারে না।
সন্তানদের মা–বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, শিক্ষক–শিক্ষিকা এবং যেকোনও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান করা শেখানো উচিত। বয়স্কদের কথা মেনে চলা, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করা এসব শেখানোর পাশাপাশি নিজেও মেনে চলা উচিত। এতে করে আপনার সন্তান লক্ষ্য করবে এবং তারা বুঝতে শিখবে যে বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা ভাল আচরণের ইঙ্গিত।
বাচ্চাদের শেখানো উচিত যে চেঁচিয়ে বা চিৎকার করে কথা বলা উচিত নয়। তাই তাদের সাথে সব সময় নমনীয় এবং কোমলভাবে কথা বলা উচিত। আপনাকে দেখে আপনার বাচ্চাও নমনীয় হতে শিখবে। এ ছাড়াও তাদের জানান যে অন্যজনের কথা বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকতে ও অপেক্ষা করতে হয়।
বাচ্চারা খাওয়ার সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে নোংরা করে ফেলে, এ ছাড়া তাদের খেলনা ব্যবহারের পর যথাযথ স্থানে গুছিয়ে নাও রাখতে পারে। তাই শিশুর নিজেকে পরিষ্কার রাখার অভ্যাসটা তৈরি করতে তাদের খাওয়ার পরে নিজের প্লেট ধোয়া শেখাতে পারেন অথবা ঘরের কাজকর্মে তাদের সাহায্য করার কথা বলতে পারেন। সময়ের সাথে তারা নিজে থেকেই পরিষ্কার থাকতে শিখে যাবে।
শিশুদের শেখানো দরকার কীভাবে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়। অন্যের কথার মাঝে বাধা না দেওয়া এবং অন্যের মতামতকে সম্মান করা ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে। তাই বেশি বেশি করে শিশুকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে মানুষের সাথে মিশতে দিতে হবে।
ছোট বয়স থেকেই বাচ্চাদের সৎ হয়ে উঠতে শেখান এবং বলুন কখনও যেন তারা মিথ্যে কথা না বলে। আর তাই আপনি নিজেও বাচ্চার সাথে মিথ্যা বলা ত্যাগ করুন ও তাকে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি না দেয়ার চেষ্টা করুন। কেন সত্যি কথা বলা জরুরি তা তাদের সামনে ব্যাখ্যা করুন।