শফিক মুন্সি, অতিথি প্রতিবেদক: ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে গত ৪ই মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।বিগত কয়েকমাসে একই পদে রুটিন দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঢেলে সাজানোয় মনোনিবেশ করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে নতুনভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা।তাই গণআন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি এ অঞ্চলের জ্ঞান – বিজ্ঞান, শিল্প – সাহিত্য সহ নানামুখী খাতে কার্যকর অবদান রাখতে পারবে বলে প্রত্যাশা অনেকের।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সদ্য সাবেক উপাচার্য ড.মোঃ ছাদেকুল আরেফিনের মেয়াদ শেষে গত নভেম্বরে পদটিতে রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয় ড.বদরুজ্জামান ভূঁইয়াকে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বৃদ্ধি , বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। বিভিন্ন কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠা ক্যাম্পাসে নতুন করে আলোকিত করণের দায়িত্ব দেন প্রকৌশল বিভাগকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বাসস্টপ এবং প্রধান ফটকটিকে মেরামত করে কাঠামোগত উন্নয়নে দৃশ্যমান পরিবর্তন শুরু করেন।
রুটিন দায়িত্ব পেয়েই যে পরিবর্তন শুরু করেছিলেন তিনি সেটির হাওয়া লাগতে শুরু করে সেখানকার চারটি হলে। এই সময়েই শেরে বাংলা হলের সম্মুখভাগে দৃষ্টি নন্দন বাগান এবং বসার জায়গা স্থাপন করতে সক্ষম হন তৎকালীন হল প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া। একইভাবে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেও করা হয় ফুলের বাগান। দীর্ঘ পরিসরে বঙ্গবন্ধু হল এবং শেখ হাসিনা হলেও একই কায়দায় উদ্যান নির্মাণ শুরু হয় তখন। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পড়ার স্থান উন্মুক্ত করার উদ্যোগে প্রশংসায় ভাসেন বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়টি জন্মলগ্ন থেকেই সেশনজট ও ক্লাসরুম সংকটে ভুগছে।এমনকি কয়েকটি বিভাগের নিজস্ব শ্রেণীকক্ষ বলতে কিছু ছিল না প্রতিষ্ঠার এত বছরেও। এই সমস্যা দূরীকরণে রুটিন দায়িত্বে থেকেই ভূমিকা রাখেন নতুন উপাচার্য। নিজ প্রতিষ্ঠানেই দ্বিতীয় পরীক্ষক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফল প্রকাশের বিলম্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। নতুন করে বরাদ্দ করেছেন শ্রেণীকক্ষ। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নকে আরো সহজ করতে গত পহেলা মার্চ বৃদ্ধি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আসন সংখ্যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থবির অবকাঠামো উন্নয়নে জোয়ার আনতে নিজ স্বপ্নের কথা বলেছেন ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। রুটিন দায়িত্বে থাকাকালীন গত ২৪শে ডিসেম্বর একটি গণমাধ্যমে তিনি জানান, ক্লাসরুমের সংকট কাটাতে ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বহুতল একাডেমিক ভবন এবং আবাসন সৃষ্টিতে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ছাত্র হলের অনুমোদন হচ্ছে শিগগিরই। উদ্যোগের সংকট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী হয়নি। মাস্টারপ্ল্যান তৈরির চেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে মডেল ভার্সিটি হিসেবে তৈরি করার কথাও জানান তিনি।
মাত্র চার মাসের দায়িত্বে এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি স্থানীয় মহলেও প্রশংসিত হয়েছেন ড. মোঃ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ খান বলেন, নতুন উপাচার্য তার ট্রায়াল পিরিয়ডে যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তা চোখে পরার মতো। অল্পদিনের নেতৃত্ব এবং কর্মগুণে সবার মধ্যে যে আশার সঞ্চার তিনি করেছেন তাতে পূর্ণ দায়িত্ব পাবার পর সকলেই তাকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছা ছিল ঢাকার পর যদি কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় হয় তবে সেটি হবে বরিশালে। কিন্তু এ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমাদের নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা আশাবাদী নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারবেন।
বরিশালের সাধারণ নাগরিক কমিটির (বসানাক) আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি খুবই চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব। এই পদে আসীন ব্যক্তিকে স্থানীয় নানা সমীকরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হয়। বর্তমান উপাচার্য পূর্বে একই জায়গায় ট্রেজারার ও রুটিন ভিসির দায়িত্ব পালনকালে সকলকেই স্বপ্ন দেখাতে সফল হয়েছেন। সেই স্বপ্নের কারণেই অনেক মানুষ তাঁর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগে খুশি হয়েছে এবং ভালোবাসায় সিক্ত করেছে। ##