
ববি প্রতিনিধি: “Healthy Soils for Healthy Cities” — অর্থাৎ, “সুস্থ শহরের জন্য স্বাস্থ্যকর মাটি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২৫ পালিত হয়। এবং সেই সাথে নানা ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করে।
৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে শেষ হয়।
এরপর দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাটির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এবং শিক্ষার্থীদের হাতে “Save Soil Save Ecosystem” মাটির দূর্ষণ রোধে সবুজ পৃথিবী গড়ি” ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মাটি দূর্ষণ প্রতিরোধী মূলক প্লেকার্ড দেখা যায়।
এ শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. জাহাঙ্গীর কবীর এবং প্রভাষক ইসরাত জাহান রিকজা সহ উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় উক্ত বিভাগের শিক্ষক ড. জামাল উদ্দীন বলেন,
‘সুস্থ শহরের জন্য স্বাস্থ্যকর মাটি এটা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মাটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খাদ্য উৎপাদন, জল সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য মৃত্তিকার প্রয়োজন। তাই আমাদের মাটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমাদের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের দায়িত্ব হল, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করা এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর এবং দূর্ষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা।’
তিনি আর উল্লেখ করেন, প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়নের কারনে যে কৃষি আবাদি জমি কমে যাচ্ছে এবং সেই সাথে পরিবেশ দূর্ষণ ও হচ্ছে সর্বপরি মাটি দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও শিল্প কারখানার যে বর্জ পদার্থ অপরিকল্পিত ভাবে ফেলা হচ্ছে এবং পরিবেশ দূর্ষণ হচ্ছে এসব প্রতিরোধে দেশের যেসব সংস্থা আছে তাদের দৃষ্টিপাত করতে বলেন।
এছাড়াও আরেক শিক্ষক কাজী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদের সুস্থ থাকতে হলে সবার আগে মাটিকে দূর্ষণ মুক্ত রাখতে হবে। কেননা, মাটি যদি বিভিন্ন ধরনের দূর্ষক পদার্থ, ভারীধাতু, মাইক্রোপ্লাস্টিক দ্বারা দূর্ষিত হয় তাহলে সেই মাটি থেকে পানি দূর্ষিত হবে এবং এখান থেকে গাছ সেই পদার্থ গুলো শোষণ করবে সবশেষে সেসব ক্ষতিকর পদার্থ আমাদের শরীরে এসে পরবে এবং আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবো। তাই মাটি ও পরিবেশ রক্ষা কার গুরুত্বপূর্ণ।
উক্ত বিভাগের শিক্ষিকা ইসরাত জাহান রিকজা বলেন, আমরা জানি যে মাটি হচ্ছে পরিবেশের একটি গুরুপূর্ণ উপাদান কারন মাটি উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এখন এই মাটি যদি দূর্ষিত হয় তাহলে সেই দূর্ষক পদার্থ খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে আমাদের শরীরেই চলে আসবে এবং আমাদের দেহে বায়োএকোমোলেশন হবে ফলে আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিবে এবং আমরা অসুস্থ হয়ে যাবো। সর্বপরি আমরা যদি সুস্থ থাকতে চাই তাহলে স্বাস্থ্যকর মাটির প্রয়োজন।
এছাড়া উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থী ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো: সোহান বলেন, “মাটি বাঁচলে বাঁচবে জীবন” আজ ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস এদিনে আমি এটুকু বলতে চাই যে স্যার আমাদের ক্লাসে একদিন বলছিলেন যে আমরা মাটিকে শুধু ফসল ফলানোর জন্য নয় মাটি পানিকেও দূর্ষণমুক্ত করে। যদি আমরা প্রতিনিয়ত মাটিতে দূর্ষক পদার্থ ফেলতে থাকি এবং প্লাস্টিক ফেলতে থাকি তাহলে সেই মাটি পানি দূর্ষণমক্ত করার ক্ষমতা হারাবে যেটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিসরুপ।
এছারাও বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা মাটির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এবং পরিবেশ দূর্ষণ রোধে সবাই কে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, উদ্ভিদের জন্ম-বৃদ্ধিতে ও মানবকল্যাণে মৃত্তিকার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতেই বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০০২ সালে প্রথমবারের মতো মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের উদ্যোগে মৃত্তিকার এর গুরুত্ব তুলে ধরার প্রস্তাব আসে। এরপর ২০১৩ সালে Food and Agriculture Organization (FAO) এবং United Nations (UN) গ্রহণ করে। এবং ৫ ডিসেম্বরকে সরকারি পর্যায়ে “World Soil Day” অর্থ্যাৎ বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০১৪ সাল থেকে ৫ ডিসেম্বর কে সরকারিভাবে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
অতশী তালুকদার, ববি প্রতিনিধি