পারভেজ হাওলাদার, বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ–মুলাদী) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি গত (৩রা নভেম্বর) ২৩৭ টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেও, আলোচিত এই আসনটির নাম সেই তালিকায় নেই। ফলে স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়েছে নানান জল্পনা–কল্পনা। কেউ বলছেন, দলীয় উচ্চপর্যায় এখনও “সমঝোতার পথ” খুঁজছে, আবার কেউ মনে করছেন, এটি “অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষার কৌশল”।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বরিশাল-৩ আসন বিএনপির জন্য যেন এক ধরনের ‘রাজনৈতিক শিক্ষা ক্ষেত্র’। সেবার দুই প্রভাবশালী নেতা—বেগম সেলিমা রহমান (দলীয় মনোনীত) ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন (স্বতন্ত্র)—একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দলীয় বিভক্তির কারণে ভোট ভাগ হয়ে যায়, এবং আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর হাতে। সেই নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিএনপির দুই প্রার্থীর মোট ভোট জয়ী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ১৩,৫০০ বেশি ছিল—যা স্পষ্ট করে দেয়, ঐক্যের অভাবই ছিল পরাজয়ের মূল কারণ।
বর্তমান সময়েও সেই বিভাজনের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারাদেশে রাজনৈতিক তৎপরতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বরিশাল-৩ আসনেও বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীরা মাঠে সক্রিয়। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ ও প্রচারণা এখনো চলছে পৃথকভাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সমালোচনা বাড়ছে, যা দলীয় ঐক্যকে আরও দুর্বল করছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় বিএনপি সম্ভবত এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই এখনো প্রার্থী ঘোষণা থেকে বিরত আছে। তারা মনে করছেন, নেতৃত্ব যদি এখনই একক প্রার্থী নির্ধারণ না করে, তাহলে মাঠে ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হবে। এতে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়তে পারে এবং ভোটের দিন কম টার্নআউটের আশঙ্কা তৈরি হবে।
স্থানীয় নেতাদের মতে, বরিশাল-৩ আসন কেবল একটি নির্বাচনী এলাকা নয়, বরং এটি বিএনপির মর্যাদার প্রতীক। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া—সেলিমা রহমান ও জয়নুল আবেদীনের মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে অপরজনকে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণায় সম্পৃক্ত করা। এরপর ঐক্যবদ্ধ জনসভা ও গণসংযোগের মাধ্যমে মাঠে নামতে পারলে কর্মীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং স্থানীয় বিভাজন অনেকাংশে মিটবে।
অন্যদিকে এই আসনটিতে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, অনেকেই ভাবছেন জোটবদ্ধ হয়ে
এ আসনটি তার নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে।যদি ও বিএনপির জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও নেই কোনো দল।
রাজনৈতিক মহল বলছে, বরিশাল-৩ আসনে ইতিহাস বারবার একটিই বার্তা দিয়েছে—“বিভাজন মানেই পরাজয়।” এবারও যদি বিএনপি অতীতের সেই শিক্ষা কাজে না লাগাতে পারে, তাহলে ২০০৮ সালের ইতিহাস আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আবারো জোটের হাতে চলে যেতে পারে এই আসনটি। আর যদি ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বে মাঠে নামে, তবে এই আসন পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা প্রবল।
বর্তমানে বরিশাল-৩ আসনের ভবিষ্যৎ যেন “অপেক্ষার তালিকায়”—দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার চেয়ে বড় অপেক্ষা এখন ঐক্যের সিদ্ধান্তে